সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বর ও খ্রিস্ট সম্বন্ধে সত্য

ঈশ্বর ও খ্রিস্ট সম্বন্ধে সত্য

মানুষ যদিও বিভিন্ন ঈশ্বরের উপাসনা করে থাকে কিন্তু কেবল একজন সত্য ঈশ্বর আছেন। (যোহন ১৭:৩) তিনি ‘পরাৎপর,’ সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা এবং সকল জীবনের উৎস। একমাত্র তিনিই আমাদের উপাসনা পাওয়ার যোগ্য।—দানিয়েল ৭:১৮; প্রকাশিত বাক্য ৪:১১.

ঈশ্বর কে?

ঈশ্বরের নাম বাইবেলের প্রাচীনতম সংস্করণের মূল পাঠ্যাংশে পাওয়া যায় প্রায় ৭,০০০ বার

যিহোবা ঈশ্বরের নাম

সদাপ্রভু, ঈশ্বর, পিতা—যিহোবার কিছু উপাধি

ঈশ্বরের নাম কী? ঈশ্বর নিজে বলেছেন: “আমি যিহোবা” আর “আমার এই নাম অনন্তকালস্থায়ী, এবং এতদ্দ্বারা আমি পুরুষে পুরুষে স্মরণীয়।” (যাত্রা ৩:১৫; ৬:২) ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম বাইবেলের প্রাচীনতম সংস্করণের মূল পাঠ্যাংশে প্রায় ৭,০০০ বার পাওয়া যায়। কিন্তু, অনেক বাইবেল অনুবাদে এই নামের পরিবর্তে অসংগতভাবে একটা উপাধি ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন “সদাপ্রভু।” ঈশ্বর চান যেন আপনি তাঁর বন্ধু হন, তাই তিনি আপনাকে ‘তাঁহার নামে ডাকিতে’ উৎসাহিত করেন।—গীতসংহিতা ১০৫:১.

যিহোবার বিভিন্ন উপাধি। বাইবেলে যিহোবাকে এই ধরনের বিভিন্ন উপাধি দ্বারা নির্দেশ করা হয়, যেমন “ঈশ্বর,” “সর্ব্বশক্তিমান্‌,” “সৃষ্টিকর্তা,” “পিতা,” “প্রভু” এবং “সদাপ্রভু।” বাইবেলে অনেক প্রার্থনা লিপিবদ্ধ রয়েছে, যেগুলোতে যিহোবাকে এক সম্মানজনক উপাধি দ্বারা সম্বোধন করা হয়েছে।—দানিয়েল ৯:৪.

ঈশ্বরের আকার ও অনুভূতি: ঈশ্বর হলেন অদৃশ্য আত্মিক ব্যক্তি। (যোহন ৪:২৪) বাইবেল নিশ্চিতভাবে জানায়, “ঈশ্বরকে কেহ . . . দেখে নাই।” (যোহন ১:১৮) বাইবেল তাঁর অনুভূতি সম্বন্ধে প্রকাশ করে। লোকেরা তাঁকে দুঃখ দিতে, আবার “তাঁহার সন্তোষের পাত্র” হতে পারে। —হিতোপদেশ ১১:২০; গীতসংহিতা ৭৮:৪০, ৪১.

ঈশ্বরের অপূর্ব গুণাবলি। কোনো জাতির ও পটভূমির লোকের প্রতি ঈশ্বর “মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” ইজি-টু-রিড ভারশন]” করেন না। (প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫) এ ছাড়া, তিনি “স্নেহশীল ও কৃপাময় . . . , ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে ও সত্যে মহান্‌।” (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬, ৭) তবে, ঈশ্বরের চারটে গুণ বিশেষভাবে হৃদয়গ্রাহী।

শক্তি। যেহেতু তিনি “সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বর,” তাই তিনি যেকোনো প্রতিজ্ঞাই করেন না কেন, তা পরিপূর্ণ করার অসীম শক্তি তাঁর রয়েছে।—আদিপুস্তক ১৭:১.

প্রজ্ঞা। ঈশ্বরের প্রজ্ঞা যে-কারো প্রজ্ঞার চেয়ে উৎকৃষ্ট। এই অর্থে বাইবেল বলে যে, তিনি “একমাত্র প্রজ্ঞাবান্‌।”—রোমীয় ১৬:২৭.

ন্যায়বিচার। ঈশ্বর সবসময় যা সঠিক, তা করেন। তাঁর কাজ “সিদ্ধ” অর্থাৎ নিখুঁত এবং “তাঁহাতে অন্যায় নাই।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪.

প্রেম। বাইবেল বলে, “ঈশ্বর প্রেম।” (১ যোহন ৪:৮) ঈশ্বর যে কেবল প্রেম দেখান, তা নয়, বরং তিনি প্রেমের মূর্ত রূপ। তাঁর সমস্ত কাজের পিছনে তাঁর অসাধারণ প্রেম রয়েছে আর এটা অনেক দিক দিয়ে আমাদের উপকৃত করে।

মানুষের সঙ্গে ঈশ্বরের বন্ধুত্ব। ঈশ্বর আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতা। (মথি ৬:৯) আমরা যদি তাঁর উপর বিশ্বাস রাখি, তা হলে আমরা তাঁর বন্ধু হতে পারি। (যাকোব ২:২৩) সত্যি বলতে কী, ঈশ্বর আপনাকে আমন্ত্রণ জানান, যেন আপনি প্রার্থনায় তাঁর নিকটবর্তী হন এবং ‘আপনার সমস্ত ভাবনার ভার তাঁহার উপরে ফেলিয়া দেন; কেননা তিনি আপনার জন্য চিন্তা করেন।’—১ পিতর ৫:৭; যাকোব ৪:৮.

ঈশ্বর ও খ্রিস্টের মধ্যে পার্থক্য কী?

যিশু ও ঈশ্বর একই ব্যক্তি নন। যিশু অদ্বিতীয় আর তা এই অর্থে যে, একমাত্র তাঁকেই ঈশ্বর সরাসরি সৃষ্টি করেছেন। এইজন্য বাইবেল তাঁকে ঈশ্বরের একজাত পুত্র বলে। (যোহন ১:১৪) যিশুকে সৃষ্টি করার পর, যিহোবা তাঁর এই প্রথমজাত পুত্রকে অন্য সমস্ত কিছু এবং সমস্ত প্রাণীকে সৃষ্টি করার জন্য “কার্য্যকারী [‘দক্ষ কর্মী,’ ইজি-টু-রিড ভারশন]” হিসেবে ব্যবহার করেছেন।—হিতোপদেশ ৮:৩০, ৩১; কলসীয় ১:১৫, ১৬.

যিশু খ্রিস্ট কখনো নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবি করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি বলেছেন: “আমি [ঈশ্বরের] নিকট হইতে আসিয়াছি, আর তিনিই আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন।” (যোহন ৭:২৯) যিশু তাঁর একজন শিষ্যের সঙ্গে কথা বলার সময় যিহোবাকে “আমার পিতা ও তোমাদের পিতা” এবং “আমার ঈশ্বর ও তোমাদের ঈশ্বর” বলে উল্লেখ করেছেন। (যোহন ২০:১৭) যিশু মারা যাওয়ার পর যিহোবা তাঁকে স্বর্গীয় জীবনে পুনরুত্থিত করেছেন এবং তাঁকে তাঁর ডান পাশে বসিয়ে প্রচুর ক্ষমতা দিয়েছেন।—মথি ২৮:১৮; প্রেরিত ২:৩২, ৩৩.

যিশু খ্রিস্ট আপনাকে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারেন

যিশু তাঁর পিতা সম্বন্ধে আমাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য পৃথিবীতে এসেছিলেন। যিহোবা নিজে যিশুর বিষয়ে বলেছেন: “ইনি আমার প্রিয় পুত্ত্র, ইহাঁর কথা শুন।” (মার্ক ৯:৭) ঈশ্বর সম্বন্ধে অন্য যে-কারো চেয়ে যিশু সবচেয়ে বেশি জানেন। তিনি বলেন: “পিতা কে, তাহা কেহ জানে না, কেবল পুত্ত্র জানেন, আর পুত্ত্র যাহার নিকটে তাঁহাকে প্রকাশ করিতে মানস করেন, সে জানে।”—লূক ১০:২২.

যিশু নিখুঁতভাবে ঈশ্বরের গুণাবলি প্রতিফলিত করেন। যিশুর তাঁর পিতার গুণাবলি এত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুকরণ করেছিলেন যে, তিনি বলতে পেরেছিলেন: “যে আমাকে দেখিয়াছে, সে পিতাকে দেখিয়াছে।” (যোহন ১৪:৯) যিশু তাঁর কথা ও কাজের মধ্যে তাঁর পিতার প্রেম প্রতিফলিত করার মাধ্যমে লোকেদের ঈশ্বরের নিকটবর্তী করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমিই পথ ও সত্য ও জীবন; আমা দিয়া না আসিলে কেহ পিতার নিকটে আইসে না।” (যোহন ১৪:৬) এ ছাড়া, তিনি বলেছিলেন: “প্রকৃত ভজনাকারীরা আত্মায় ও সত্যে পিতার ভজনা করিবে; কারণ বাস্তবিক পিতা এইরূপ ভজনাকারীদেরই অন্বেষণ করেন।” (যোহন ৪:২৩) কল্পনা করুন! যিহোবা আপনার মতো লোকেদের খুঁজছেন, যারা তাঁর সম্বন্ধে সত্য জানতে চায়।