সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি ঈশ্বরের উপর অসন্তুষ্ট?

আপনি কি ঈশ্বরের উপর অসন্তুষ্ট?

“কেন আমার প্রতি এমনটা ঘটল? কেন ঈশ্বর এটা ঘটার অনুমতি দিলেন?” ব্রাজিলে বসবাসরত ২৪ বছরের সিডনেকে এই প্রশ্নগুলো যেন তাড়া করে বেড়াত। এক বিনোদন পার্কে জলে খেলার সময় তার দুর্ঘটনা ঘটে, ফলে তাকে বাকি জীবনটা হুইল চেয়ারে কাটাতে হয়।

মানুষ যখন দুর্ঘটনা, অসুস্থতা, কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা যুদ্ধের ফলে দুঃখকষ্ট ভোগ করে, তখন সে সহজেই ঈশ্বরের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ে। এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। প্রাচীন কালে কুলপতি ইয়োব একের-পর-এক দুঃখজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি ভুল বুঝেছিলেন এবং এই কথাগুলো বলার মাধ্যমে ঈশ্বরকে সেই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছিলেন: “আমি তোমার কাছে আর্ত্তনাদ করি, তুমি উত্তর দেও না; আমি দাঁড়াইয়া থাকি, তুমি আমার প্রতি দৃষ্টিমাত্র করিতেছ। তুমি আমার প্রতি নির্দ্দয় হইয়া উঠিতেছ, আপন ভুজবলে আমাকে তাড়না করিতেছ।”—ইয়োব ৩০:২০, ২১.

ইয়োব জানতেন না, সেই সমস্যাগুলো কোথা থেকে আসছে অথবা কেনই-বা আসছে কিংবা কেন শুধু তার উপরেই আসছে। আনন্দের বিষয় হল, আমরা বাইবেল থেকে জানতে পারি, কেন এই দুঃখজনক ঘটনাগুলো ঘটছে আর সেইসঙ্গে এও জানতে পারি, সেগুলোর প্রতি আমাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত।

মানুষ দুঃখকষ্ট ভোগ করুক, এটাই কি ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ছিল?

ঈশ্বর সম্বন্ধে বাইবেল আমাদের জানায়: “তাঁহার কর্ম্ম সিদ্ধ, কেননা তাঁহার সমস্ত পথ ন্যায্য; তিনি বিশ্বাস্য ঈশ্বর, তাঁহাতে অন্যায় নাই; তিনিই ধর্ম্মময় ও সরল।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪) যদি তা-ই হয়ে থাকে, তবে এটা মেনে নেওয়া কি যুক্তিসংগত, সেই ঈশ্বর যিনি “ধর্ম্মময় ও সরল,” তিনি চাইবেন মানুষ দুঃখকষ্ট ভোগ করুক? অথবা তিনি কি মানুষকে শাস্তি দেওয়ার কিংবা সংশোধন করার জন্য বিপর্যয় নিয়ে আসবেন?

এর বিপরীতে, বাইবেল আমাদের জানায়: “পরীক্ষার সময়ে কেহ না বলুক, ঈশ্বর হইতে আমার পরীক্ষা হইতেছে; কেননা মন্দ বিষয়ের দ্বারা ঈশ্বরের পরীক্ষা করা যাইতে পারে না, আর তিনি কাহারও পরীক্ষা করেন না।” (যাকোব ১:১৩) আসলে, আমরা বাইবেল থেকে শিখেছি, ঈশ্বর যখন মানুষকে সৃষ্টি করেছিলেন, তখন সব কিছু নিখুঁত ছিল। তিনি প্রথম মানবদম্পতি আদম ও হবাকে একটা সুন্দর ঘর, জীবনের জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় বিষয় এবং উদ্দেশ্যপূর্ণ কাজ দিয়েছিলেন। ঈশ্বর তাদের বলেছিলেন: “তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত কর।” তাই, ঈশ্বরের উপর অসন্তুষ্ট হওয়ার কোনো কারণই আদম ও হবার ছিল না।—আদিপুস্তক ১:২৮.

কিন্তু বর্তমানে, আমরা যে-পরিস্থিতিতে বেঁচে রয়েছি, তা একেবারেই নিখুঁত নয়। সত্যি বলতে কী, ইতিহাসজুড়ে দেখা যায়, মানুষের পরিস্থিতি দিনের পর দিন আরও খারাপ হয়েছে। এই বর্ণনা খুবই সত্য: “সমস্ত সৃষ্টি এখন পর্য্যন্ত একসঙ্গে আর্ত্তস্বর করিতেছে, ও একসঙ্গে ব্যথা খাইতেছে।” (রোমীয় ৮:২২) কেন?

কেন দুঃখকষ্ট রয়েছে?

কেন দুঃখকষ্ট রয়েছে, তা জানার জন্য আমাদের সেই সময়ে ফিরে যেতে হবে, যখন তা শুরু হয়েছিল। ঈশ্বর আদম ও হবাকে “সদসদ্‌-জ্ঞানদায়ক যে বৃক্ষ,” সেটার ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু, তারা এক বিদ্রোহী স্বর্গদূত, পরে যাকে শয়তান দিয়াবল বলা হয়েছে, তার দ্বারা প্ররোচিত হয়েছিল এবং সেই আজ্ঞা লঙ্ঘন করার মাধ্যমে সঠিক ও ভুলের বিষয়ে ঈশ্বরের মান প্রত্যাখ্যান করেছিল। দিয়াবল হবাকে বলেছিল, ঈশ্বরের অবাধ্য হলে তারা মারা যাবে না আর এভাবে দিয়াবল দোষারোপ করেছিল যে, ঈশ্বর মিথ্যাবাদী। এ ছাড়া, শয়তান অভিযোগ করেছিল, ঈশ্বর তাঁর প্রজাদের ভালো-মন্দ নির্ধারণ করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন। (আদিপুস্তক ২:১৭; ৩:১-৬) শয়তান ইঙ্গিত দিয়েছিল, মানুষ ঈশ্বরের শাসন ছাড়া আরও ভালো থাকবে। এই সমস্তকিছু একটা গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয় উত্থাপন করেছিল আর তা হল, ঈশ্বর কি শাসন করার জন্য যোগ্য ছিলেন?

দিয়াবল আরেকটা বিচার্য বিষয় উত্থাপন করেছিল। সে অভিযোগ করেছিল, মানুষ স্বার্থপর উদ্দেশ্য নিয়ে ঈশ্বরের সেবা করে। বিশ্বস্ত ব্যক্তি ইয়োবের বিষয়ে দিয়াবল ঈশ্বরকে বলেছিল: “তুমি তাহার চারিদিকে, তাহার বাটীর চারিদিকে ও তাহার সর্ব্বস্বের চারিদিকে কি বেড়া দেও নাই? . . . কিন্তু তুমি একবার হস্ত বিস্তার করিয়া তাহার সর্ব্বস্ব স্পর্শ কর, তবে সে অবশ্য তোমার সম্মুখেই তোমাকে জলাঞ্জলি দিবে।” (ইয়োব ১:১০, ১১) যদিও শয়তান ইয়োবের উদ্দেশে কথাগুলো বলেছিল কিন্তু সে আসলে বলতে চেয়েছিল, ঈশ্বরের সেবা করার পিছনে সমস্ত মানুষেরই স্বার্থপর উদ্দেশ্য রয়েছে।

যেভাবে ঈশ্বর বিচার্য বিষয়গুলোর মীমাংসা করেন

সেই মৌলিক বিচার্য বিষয়গুলো চিরকালের জন্য সমাধান করার সবচেয়ে ভালো উপায় কী হতে পারে? ঈশ্বর, যিনি সর্ববিজ্ঞ, তিনি সবচেয়ে ভালো উপায়টা জানতেন। সেই উপায় সম্বন্ধে জানা আমাদের অসন্তোষ কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। (রোমীয় ১১:৩৩) তিনি কিছু সময়ের জন্য মানুষকে নিজেদের শাসন করার অনুমতি দিয়েছেন আর এটার ফলাফলই প্রমাণ করবে যে, কার শাসন সর্বোত্তম।

বর্তমান জগতের কষ্টকর পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে দেখায়, মানুষের শাসন সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। জাগতের সরকারগুলো শুধু যে শান্তি, নিরাপত্তা এবং সুখ আনতে ব্যর্থ হয়েছে তা-ই নয়, তারা পৃথিবীকে প্রায় ধ্বংসের দোরগোড়ায় এনে ফেলেছে। এটা বাইবেলে লিপিবদ্ধ একটা মৌলিক সত্যকে তুলে ধরে: “মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।” (যিরমিয় ১০:২৩) শুধুমাত্র ঈশ্বরের শাসনপদ্ধতি চিরকালীন শান্তি, সুখ এবং সমৃদ্ধির নিশ্চয়তা দিতে পারে কারণ সেটাই হল ঈশ্বরের উদ্দেশ্য।—যিশাইয় ৪৫:১৮.

কিন্তু, কীভাবে ঈশ্বর মানুষের জন্য তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করবেন? মনে করে দেখুন, যিশু তাঁর অনুসারীদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন: “তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হউক।” (মথি ৬:১০) হ্যাঁ, ঈশ্বর সঠিক সময়ে তাঁর রাজ্যের মাধ্যমে সমস্ত দুঃখকষ্টের কারণ দূর করবেন। (দানিয়েল ২:৪৪) দরিদ্রতা, রোগব্যাধি এবং মৃত্যু আর থাকবে না। দরিদ্র লোকেদের বিষয়ে বাইবেল জানায়, ঈশ্বর “আর্ত্তনাদকারী দরিদ্রকে, . . . উদ্ধার করিবেন।” (গীতসংহিতা ৭২:১২-১৪) অসুস্থ ব্যক্তিদের বিষয়ে বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে, “নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত।” (যিশাইয় ৩৩:২৪) এমনকী যে-মৃত ব্যক্তিরা ঈশ্বরের স্মৃতিতে রয়েছে, তাদের বিষয়ে যিশু বলেছিলেন: “এমন সময় আসিতেছে, যখন কবরস্থ সকলে তাঁহার রব শুনিবে, এবং . . . বাহির হইয়া আসিবে।” (যোহন ৫:২৮, ২৯) কত-ই না সান্ত্বনাদায়ক প্রতিজ্ঞা!

ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার উপর বিশ্বাস গড়ে তোলা, তাঁর প্রতি থাকা যেকোনো অসন্তোষ কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে

অসন্তোষ কাটিয়ে ওঠা

প্রবন্ধের শুরুতে উল্লেখিত সিডনে তার দুর্ঘটনা ঘটার প্রায় ১৭ বছর পর বলেন: “আমি কখনো আমার দুর্ঘটনার জন্য যিহোবা ঈশ্বরকে দোষারোপ করিনি কিন্তু এটা স্বীকার করতেই হবে যে, প্রথম প্রথম আমি তাঁর উপর অসন্তুষ্ট হয়েছিলাম। এমন অনেক দিন গিয়েছে, যখন আমার খুবই খারাপ লাগত। নিজের শারীরিক অক্ষমতার কথা ভেবে আমার দু-চোখ বেয়ে জল পড়ত। কিন্তু, বাইবেল থেকে আমি এটা বুঝতে পেরেছিলাম, ঈশ্বর আমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটাননি। কারণ বাইবেল বলে: ‘সকলের প্রতি কাল ও দৈব ঘটে।’ যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা আর সেইসঙ্গে কিছু নির্দিষ্ট শাস্ত্রপদ পড়া আমাকে আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী করেছে এবং আমাকে এক ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখতে সাহায্য করেছে।”—উপদেশক ৯:১১; গীতসংহিতা ১৪৫:১৮; ২ করিন্থীয় ৪:৮, ৯, ১৬.

আমরা যদি মনে রাখি, কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকার অনুমতি দিয়েছেন এবং কীভাবে এর প্রভাব শীঘ্রই দূর হবে, তবে তা ঈশ্বরের উপর থাকা যেকোনো অসন্তোষ কাটিয়ে উঠতে আমাদের সাহায্য করবে। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, “যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, [ঈশ্বর] তাহাদের পুরস্কারদাতা।” ঈশ্বর ও তাঁর পুত্রের উপর বিশ্বাস রাখে এমন কেউই আর অসন্তুষ্ট হবে না।—ইব্রীয় ১১:৬; রোমীয় ১০:১১. ▪ (w15-E 09/01)